স্বদেশ ডেস্ক:
গাজা উপত্যকার রাফায় শুক্রবার ইসরাইলি একটি হেলিকপ্টারকে লক্ষ্য করে রুশ-নির্মিত ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য (স্যাম) ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) যোদ্ধারা এই হামলা করে বলে ইনস্টিটিউট ফর স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) এবং ক্রিটিক্যাল ট্রিটস প্রজেক্ট (সিটিপি) তাদের সর্বশেষ যৌথ রণাঙ্গন প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিরক্ষা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক দুটি জানায়, হেলিকপ্টারটি রাফা থেকে ইসরাইলি হতাহতদের সরানোর সময় হামলার মুখে পড়ে। পিআইজে যোদ্ধারা রুশ মডেল এসএ-১৮ গ্রুস বহনযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার দিয়ে এই হামলা চালায়।
শুক্রবার গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা বেশ কয়েকবার মর্টার, রকেট এবং রকেট-চালিত গ্রেডেন হামলা চালায়। বিশেষ করে মধ্যগাজার নেটজারিত করিডোর, দক্ষিণে রাফা এবং ইসরাইলের সাথে ক্রসিংয়ের কাছে ইসরাইলি অবস্থানে এসব হামলা চালানো হয়।
হোয়াইট হাউস ও নেতানিয়াহু’র মধ্যে নতুন উত্তেজনা
মার্কিন অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন এবং বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে এই সপ্তাহে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। হোয়াইট হাউস বৃহস্পতিবার এই পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক’ এবং ‘হতাশাজনক’ বলে বর্ণনা করেছে।
ইস্যুটি শুরু হয়েছিল যখন নেতানিয়াহু এই সপ্তাহের শুরুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দাবি করেছেন, ইসরাইলের প্রধান সামরিক সমর্থক মার্কিন প্রশাসন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তার দেশ থেকে ‘অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ আটকে রেখেছে।’ এরপরেই নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এই মন্তব্যগুলো গভীরভাবে হতাশাজনক এবং অবশ্যই আমাদের জন্য বিরক্তিকর। আমাদের যে পরিমাণ সমর্থন রয়েছে এবং প্রদান করা অব্যাহত থাকবে।’
কিরবি বলেন, ‘হামাসের হুমকির বিরুদ্ধে ইসরাইলের আত্মরক্ষায় খুব স্পষ্টভাবে বলতে গেলে এই অঞ্চলে দেশটি যে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে সে ক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশ সাহায্য করছে না।’
আগের দিন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জেন-পিয়েরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা সত্যিকার অর্থে জানি না তিনি কী বিষয়ে কথা বলছেন।’
‘একটি নির্দিষ্ট অস্ত্রশস্ত্রের চালান’ বাদ দিয়ে জেন-পিয়ের বলেন, ‘এখানে অন্য কোনো অস্ত্র সরবরাহের বিরতি নেই। কোনোটিই নয়।’
২,০০০ পাউন্ড বোমার একটি চালানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওয়াশিংটন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে উদ্বেগের কারণ পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার পরে দ্বিগুণ ক্ষোভ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি ‘ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হওয়ার জন্য প্রস্তুত। যদিও ইসরাইল আমেরিকার কাছ থেকে তার অস্তিত্বের জন্য যুদ্ধের প্রয়োজনীয় গোলাবারুদ পায়।’
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলি সরকার প্রধান এবং বাইডেনের প্রশাসনের মধ্যে এই বিরোধ প্রথম নয়। বাইডেন এর আগে দক্ষিণ গাজার রাফাহতে একটি বড় ইসরাইলি অভিযানের কঠোর বিরোধিতা করেছিলেন। সেখানে এক মিলিয়নেরও বেশি বেসামরিক লোক ছিল এবং তার সতর্কতা না মানলে কিছু অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন লেবাননে উত্তেজনা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সতর্ক করেছেন। হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরাইলে কয়েক ডজন রকেট নিক্ষেপের সাথে একটি বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা বেড়েছে।
স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতিতে বলেছে, ওয়াশিংটনে শীর্ষস্থানীয় ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের সময় ব্লিঙ্কেন ‘লেবাননে আরও উত্তেজনা এড়াতে এবং একটি কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছানোর গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। যাতে ইসরাইলি ও লেবাননের পরিবারগুলোকে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারে।’
হামাস শাসিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়,গাজায় ইসরাইলের প্রতিশোধমূলক আক্রমণে কমপক্ষে ৩৭,৪৩১ জন নিহত হয়েছে। এদের বেশিভাগই বেসামরিক নাগরিক।
সূত্র : আল জাজিরা ও এএফপি